একজন গতানুগতিক দর্শকের মত করে গত এশিয়া কাপ ফাইনালের কথা যদি বলি। প্রথমেই আমার কান্না দিয়েই শুরু করতে হয়। যেহেতু পুরুষ, কান্নাটা আমাদের জন্য একটা ট্যাবু। গত দুই দিন ধরে বাংলার টাইগারদের খেলা নিয়ে সোসাল মিডিয়াই যে হা হুতাশ শুরু হয়েছে সেটা আমায় বড্ড পুড়াচ্ছে। ইন্ডিয়াকে একটুর জন্য হারাতে না পারার পাহাড় সমান দু:খ নিয়ে আশেপাশের নদীতে ত আর জায়গা হবেনা, তাই সমুদ্রে ডুবলেই যেন বাচে। কিন্তু এই দু:খ আমাদের কতদিন মনে থাকে এবং দু:খ করাটাই বা কি অর্থ বহন করে আমার বুঝতে সময় খরচা হয়। আর বিশটা রান হলে জিতে যেতাম, লিটনের আউটটা না দিলে আমাদের স্কোর বোর্ডে আরো বিশ ত্রিশটা রান যোগ হত এরকম আরো একশটা কারণ দেখিয়ে যখন আমরা আড্ডাটা জমিয়ে তুলি, তখন আমাদের মাথায় থাকেনা আমাদের বিপক্ষ দল ইন্ডিয়া। যারা আইসিসি রেংকিংয়ে দুই নাম্বারে দাড়িয়ে আছে। এরপরও আপনার যদি মনে হয় বাংলাদেশ যেকোন দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। তাহলে আমার একটা অবজ্ঞার হাসি হাসতেই হয়। হ্যা, হারানো যায়, তবে সেটা অ্যাক্সিডেন্টলি, আমি আবার বলছি সেটা এক্সিডেন্টলি। যেরকমটা ২০০৭ সালে হয়েছিল। এখানে বাংলাদেশের মাঠিতে ইন্ডিয়ার সিরিজ হারার বিষয়টা টানবেন না প্লিজ। ঘরের মাঠের খেলা দিয়ে বাংলাদেশের খেলাকে বিচার করলে আমরা এতদিনে বিশ্বকাপ কেন পেলাম না সেটা নিয়েও একটা নতুন দু:খ যোগ করতে হবে। বরং এশিয়া কাপ নিয়ে চিন্তা করা যাক। আসেন তাহলে বলি আমার কেন মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ইন্ডিয়াকে হারিয়ে অন্তত এই এশিয়া কাপটা ডিজার্ব করেনা। গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ একাদশ আর ইন্ডিয়া একাদশ নিয়ে তুলনা করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি এক নম্বারে বাংলাদেশের প্রথম সারি কোন খেলোয়াড়কে বসানো হয় এর পর আরেকজন কে এরপর অন্যজনকে এভাবে সমস্ত এগারজনকে বসায় এবং তার পাশে ইন্ডিয়ার এগারজন একি নিয়মে বসায়। ধরেন বাংলাদেশের এখানে এক নাম্বারে বসালাম মুশফিককে। ইন্ডিয়ার কে? হ্যা সত্যিই ধরেছেন, রহিত। এদের দুজনের মধ্যে কে এগিয়ে থাকবে? যদি আপনি ক্রিকেট দেখে থাকেন তাহলে অবশ্যই রহিতের নামটা আসবে। এরপর বাংলাদেশের দুই নাম্বারে কাকে বসানো যায়? মাথায় আসছেনা ত? তাহলে মাহমুদুল্লাহকে বসানো যাক। ইন্ডিয়ার ধনি। কাকে এগিয়ে রাখবেন ধনি না মাহমুদুল্লাহ? এরপর সৌমকে বসায় তার বিপরিত পাশে বসায় শেখর ধাওয়ান। এদের মধ্যে কে চোখে পড়বে? এবার লিটন দাশকে আনা যাক। তার পাশে দিনেশ কার্তিক। ইমরুল কায়েস। পাশে এম্বতি রাইডু। মিতুন এর পাশে কাদের জাদাব। মেহেদি হাসানের পাশে জাজেদাকে বসান। মাশফির আর ভোবনেশ্বর এর মধ্যে মাশরাফিকে এগিয়ে রাখি। আর মোস্তাফিজ এবং ভোমরার মধ্যে মোস্তাফিজকেও এগিয়ে রাখা যাক। কিন্তু এরপর কোলদিপ ইয়াদব এর পাশে রুবেলকে বা সালাহ এর পাশে নাজমুল অপুকে সমান ভাবতে পারবেন না। তাহলে এবার বলেন কাপটা কারা ডিজার্ব করে? বিশ্বাস করুন বাংলাদেশ একটা ট্রপি জিতুক সেটা আমিও চাই। কিন্তু একটা জায়গায় এসে বাংলাদেশের ব্যর্থতাটাই বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠে। যেমন, যে ভাল খেলছে তার উপর সমস্ত ম্যাচের দায়ভার তুলে দেওয়াটা বাংলাদেশের এক ঐতিহ্যগত অভ্যাস। আমি কখনো দেখিনি একটা ভাল ঝুটি করার পর যদি সেটা মাঝপথে এসে ভেঙ্গে যায়, নতুন একটা ঝুটি বাংলাদেশ কখনো করতে পেরেছে। আর ম্যাচের শেষের ধিকে এসে যখন ফাস্ট বোলাররা বল করতে আসে তারা বুঝতে পারেনা কিভাবে বলটা করা উচিত। প্রত্যেক ভাল ভাল দলের বলাররা শেষের দিখে এসে তাদের প্রত্যেকটা বল ডেলিভারি থাকে ব্লকহোলে। আমার আশ্চার্য লেগেছে সেদিন দেখতেছি আফগানিস্থানের বলাররাও ম্যাছের শেষের দিকে একিভাবে ব্লকহোলে বল করা শিখে গেছে। অথচ এই বিষয়টা বাংলদেশের কোন বলাররাই করতে পারেনা। আর সবচেয়ে যেটা আমাদের ভোগাচ্ছে সেটা হল নতুন খেলোয়াড়রা। গত পাঁচ বছর ধরে যত নতুন খেলোয়াড় বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েছে কেউ দলে একটা নির্দিষ্ট স্থান করে নিতে পারেনি। আজকে এ খেললে কাল ও পরশু অন্যজন এভাবেই চলছে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? অন্যান্য দেশে যেখানে নতুনদের দলে যায়গা দেওয়ার জন্য অনেক পুরাতন খেলোয়াড়দের যায়গা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে এসে যদিওবা পুরাতন কাউকে সরিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হয়। দু এক ম্যাচ পরে আবার সেই যায়গায় পুরাতন কাউকে নিয়ে আসতে হয়। আর বিসিবির রাজনীতির কথা নাহয় এড়িয়ে যাওয়া যাক। এই সবকিছুর পরেও আমারা একটা জয়ের আশা নিয়েই টিভি বা মাঠের দিকে চেয়ে থাকি। আমরা আশায় আছি সেই আশা যেন পূর্ণ হয়।
facbook